নামাজ/স্বলাতের ভিতরে মুনাজাতের স্থান পর্ব ১
প্রথম পর্ব
بِسْمِ
اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
স্বলাতের ভিতরে দাড়ানো
থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত পূরো স্বলাতটাই যে 'মুনাজাত' স্বলাতের ভিতরে দু’আর অর্থের দিকে তাকালে বুঝাজাই। (১) ‘মুনাজাত’ (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই থেকে نَاجَى يُنَاجِىْ مُنَاجَاةً ব্যবহার হয়। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা।(আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুল-তুরকী : আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ), পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আ‘লাম (বৈরুত-লেবানন
: আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ, ৪১তম প্রকাশ : ২০০৫, পৃঃ ৭৯৩।)
(২) শরী‘আতের পরিভাষায় মুনাজাত হল, স্বলাতের মধ্যে আল্লাহ
তা‘আলার সাথে মুসল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। সহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য
হাদীস গ্রন্থে উক্ত
অর্থেই মুনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন
রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন
إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذاَ قَامَ فِىْ صَلاَتِهِ
فَإِنَّهُ يُنَاجِىْ رَبَّهُ
অর্থ:- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন তার স্বলাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মুনাজাত করে’। (বুখারী, তিও. হা/৪০৫, ৪১৭, ৫৩১, ৫৩২ ও ১২১৪, ইফা. হা/৩৯৬, ৪০৬, ৫০৬, ৫০৭, ১১৪১, আপ্র.৩৯০, ৪০০, ৫০০, ৫০১, ১১৩৫,)
(৩) আরেক হাদীসে এসেছে,
إِنَّ الْمُصَلِّىْ
يُنَاجِىْ رَبَّهُ ‘নিশ্চয়ই মুসল্লী তার রবের সাথে মুনাজাত করে’।(মিশকাত হা/৮৫৬, ১/২৭১ পৃঃ, সনদ সহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৯৬, ২/২৮৪ পৃঃ।)
(৪) অন্য হাদীসে রসূল (সঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ স্বলাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুসল্লাতে স্বলাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে’। (সহীহ বুখারী, তাও. হা/৪১৬, ইফা. হা/৪০৫, আপ্র.হা/৩৯৯, মিশকাত হা/৭১০, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৫৮, ২/২১৯ পৃঃ,।)
উল্লেখ্য, হাদীসে উল্লিখিত يُنَاجِى
শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া। আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ) মুনাজাত।
মুসল্লী স্বলাতের মধ্যে
সারাক্ষণই যে মুনাজাত করে এবং পুরো স্বলাতটাই যে তার জন্য মুনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো
থেকে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুসল্লী যখন স্বলাত শেষ করে, তখন তার মুনাজাতও শেষ
হয়ে যায়।
(৫)মুসল্লী স্বলাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মুনাজাত করে তাও
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি স্বলাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ, যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল আলামীন’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময় পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন’
(যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার
নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার
জন্য আর প্রার্থনা তার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, সিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গাইরিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায যা-ল্লীন (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে,
তা তার জন্য’। (আমীন)। (সহীহ মুসলিম হাএ. হা/৭৬৪, ইফা. হা/৭৬২বা, ৭৬৪, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত,হাএ. হা/৮২৩,)
(৬) মুনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ
স্থান হল স্বলাত (বাক্বারাহ ৪৫)।
স্বলাতের ভিতরে দাড়ানো
থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত পূরো স্বলাতটাই যে 'মুনাজাত' উপরিউক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা তা-ই প্রমাণিত হয়।
আমাদের মুর্খতার বড়
কারন আমরা স্বলাতে দাঁড়িয়ে কি'বলি রুকুতে কি'বলি, রুকুথেকে উঠে, কি'বলি, সাজদায় কি'বলি, সাজদাথেকে উঠে কি'বলি, আর বৈঠকে বসে তাশাহুদ,
দুরুদ, দু’আ মাসুরাতে কি'বলি তাজানিনা, আর জানার ও চেষ্টা করিনা।
সম্মানিত পাঠকগণ স্বলাতের ভিতর কিভাবে মোনাজাতকরে এবং কি বলে তা দ্বিতীয় পর্বে তুলে ধরা
হবে।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
- সালাত হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা প্রদত্ত নিয়ামতরাজির শুকরিয়া
- নামাজ/স্বলাতের ভিতরে মুনাজাতের স্থান পর্ব ২
- আমরা অনেক পাপ কাজ করি কিন্তু আমরা জানি এই কাজটি পাপের । কাজটি করলে আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন, তবুও করি কেনো করি?
- কি ভাবে মানুষকে পথ ভ্রষ্ট করে জানেন?/শয়তানের কৌশল
- আপনি কি জানেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফযীলত জানলে সলাত ত্যাগ করতেন না
- আল্লাহর ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিংবা লোক দেখানো ইবাদাত করা শিরক
- আল্লাহ ব্যতীত আল্লাহ্র সৃষ্টির প্রতি ভরসা বা নির্ভর করা শিরক/সমাজে কিছু কমন শিরক