আপনি কি জানেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফযীলত জানলে সলাত ত্যাগ করতেন না
আপনি কি জানেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফযীলত জানলে সলাত ত্যাগ করতেন না!!! ২
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى. وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ
فَصَلَّى
"নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ
করে অতঃপর সালাত আদায় করে"।
(সূরা আলা ১৪-১৫)
আল্লাহ তা'আলা আরো ইরশাদ করেন-
إِنَّ الْإِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا. إِذَا مَسَّهُ
الشَّرُّ جَزُوعًا. وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا. إِلَّا الْمُصَلِّينَ.
الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ
"নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ভীরুরূপে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হা-হুতাশ করে। আর যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে তখন সে কৃপণতা দেখায়। তবে মুসল্লীরা এমন নয়- যারা তাদের সালাতে সার্বক্ষণিক কায়েম
থাকে। (সূরা মাআরিজ ১৯-২৩)
আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এক জুমু'আ থেকে অন্য জুমু'আ পর্যন্ত তার মধ্যবর্তী গুনাহের জন্য কাফ্ফারাস্বরূপ, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়।
আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি
ইরশাদ করেন, বলতো যদি কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে আর তাতে সে দৈনিক পাঁচবার
গোছল করে তবে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন,
কোন কিছ অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বললেন, এরকমই পাঁচ ওয়াক্ত সালতের দৃষ্টান্ত যার দ্বারা আল্লাহ বান্দার
গুনাহ সমূহ মুছে দেন।
(বুখারী:৫২৮, মুসলিম:৬৬৭)
আমর ইবনে মুররা আল
জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে
বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, বলুন তো যদি আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আপনি আল্লাহর রাসূল এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ি, যাকাত আদায় করি, রমযানের রোযা রাখি, রাত্রি জাগরণ করি, তবে আমি কোন দলের অর্ন্তভুক্ত। তিনি বললেন, তুমি সিদ্দীক ও শহীদগণের অন্তর্ভুক্ত।[সহীহ ইবনে হিব্বান ও সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, আলবানী এ হাদীসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।
উসমান ইবনে আফ্ফান
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে একটি হাদীস বলব, যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকত তাহলে আমি তা তোমাদের বলতাম না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি
বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে অতঃপর সালাত পড়বে আল্লাহ তা'আলা তার এ সালাত ও পরবর্তী সালতের মধ্যবর্তী গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।[বুখারী, মুসলিম]
আবু উমামা রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের উদ্দেশ্যে ওযু করে অতঃপর তার হাতের কব্জি ধৌত করে তখণ পানির
প্রথম ফোঁটার সাথে তার হাত দ্বারা কৃত গোনাহসমূহ ঝরে পড়ে। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির প্রথম ফোঁটার সাথে তার চোখ
ও মুখ থেকে গুনাহসমূহ ঝরে পরে। যখন কনুই পর্যন্ত দু'হাত ও টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করে তখন তার আশপাশের সকল গুনাহ থেকে
সে নিরাপদ হয়ে যায়, ফলে সেদিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছে। যখন সে সালাতে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তার মর্যাদা উঁচু করেন
[আহমদ রহ., আলবানী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]।
ইবনে উমর রা. থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট ফযীতলপূর্ণ সালাত জুমু'আর দিন ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা[] আবু নাঈম- হিলইয়াহ, বায়হাকী- শু'আবুল ঈমান, আলবানী র. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]।
• সালাত সাহায্য, দৃঢ়তা, ইহকাল ও পরকালের সফলতার অন্যতম মাধ্যম
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ. الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ
خَاشِعُونَ
"মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়ী"।
(সূরা আল-মুমিনূন ১)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন :
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى. وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ
فَصَلَّى
"নিশ্চয় সে সাফল্য লাভ করবে যে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ
করে অতঃপর সালাত আদায় করে"
(সূরা আলা ১৫-১৬)
সালাতকে কল্যাণ নামকরণ
করা হয়েছে। তার প্রতি আহ্বানকে
করা হয়েছে কল্যাণের প্রতি আহ্বান। যেমন- حي على الصلاة এসো সালাতের দিকে। حي على الفلاح এসো কল্যাণের দিকে। ফালাহ বলা হয়, উদ্দেশ্যে জয়লাভ করা,
কল্যাণ স্থায়ী হওয়া।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ
তা'আলার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন :
اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
"তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও" (সূরা বাকারা ১৫৩)
আল্লাহ তা'আলা আরো ইরশাদ করেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ
فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন
কোন দলের সাথে সংঘাতে মিলিত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে স্মরণ কর যাতে তোমরা
সফলকাম হতে পার"। (সূরা আনফাল ৪৫)
সম্ভবত যুদ্ধের ময়দানে
সশস্ত্র অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও সালাতুল খাওফের বিধান দেওয়া হয়েছে যাতে সালাতের মাধ্যমে
আল্লাহর সাহায্য লাভ করা যায়।
সা'দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের সাহায্য করবেন দুর্বলদের দ্বারা। তাদের দাওয়াত, তাদের সালাত ও তাদের ইখলাসের দ্বারা।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ
وَآَتَيْتُمُ الزَّكَاة
"আমি তোমাদের সঙ্গে আছি যদি তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর" (সূরা মায়েদা ১২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা
হল, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি সাহায্য সহায়তার জন্য যদি তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত
আদায় কর। আল্লাহ যার
সাথে থাকবেন, তার দায়িত্ব নিবেন। আল্লাহর সাথে যে শত্রুতা করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন না। যে তার সাথে বন্ধুত্ব করবে তাকে লাঞ্ছিত করবেন না। বরং লাঞ্ছনা তার সাথেই থাকবে। যে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তাঁর অবাধ্য হবে, আমি তাদেরকে বিজয় দান করলে তারা লোকদের মাঝে সালাত কায়েম করবে আল্লাহর আয়াতই এ
কথার সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا
الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ
الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
"তারা এমন লোক যাদেরকে আমি শক্তি সামর্থ্য দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এব সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত"। (সূরা হজ ৪১)
ইমাম খাত্তাবী র. বলেন, এ আয়াত প্রমাণ করে যে, জামাআতে হাজির হওয়া ওয়াজিব। যদি মুস্তাহাব হত তাহলে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্তদের জামাআত ত্যাগ
করার সবচে' বেশি অবকাশ থাকত। ইবনে উম্মে মাকতুমের অবস্থাও এরকমই ছিল। কিছু লোকের মত হল জুমু'আ ও দুই ঈদ ব্যতীত পাঁচ ওয়াক্ত সালতের জামাআত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। জুমু'আ ও দুই ঈদের জামাআত শর্ত। এটা ওয়াজিবের কাছাকাছি। এমনকি যদি শহরবাসীরা তা তরক করে, তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবে। আর যখন একজন তরক করবে তাকে প্রহার ও বন্দি করা হবে। কারো তরক করার অনুমতি নেই। তবে অধিক অন্ধকার ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা বৃষ্টির ওজরের ভিত্তিতে
তা তরক করার অনুমতি রয়েছে।[আল-কাসানী]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায়
বলেছেন, এরূপ কঠোর বাণী একমাত্র ওয়াজিব তরক করার ক্ষেত্রেই হতে পারে।
আতা ইবনে আবী রাবাহ
বলেন, শহরে ও গ্রামে কোন মানুষের জন্য আযান শুনে সালাত ত্যাগ করার
অনুমতি নেই।