সালাত হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা প্রদত্ত নিয়ামতরাজির শুকরিয়া
مُنِيْبِيْنَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوْهُ وَأَقِيْمُوا
الصَّلاَةَ وَلاَ تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
অর্থাৎ, বিশুদ্ধচিত্তে তাঁর অভিমুখী হও; তাঁকে ভয় কর, যথাযথভাবে নামায পড়, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হ্য়ো না। (রুম
৩১)
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمان)
হাদিস নম্বরঃ ১৪৯,১৫০
নামায পরিত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দের প্রয়োগ
১৪৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ আততামীমী এবং উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, বান্দা
এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা।
যেহেতু আল্লাহ তা'আলা শুকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকে তার অনুগ্রহ-অনুকম্পা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে
স্থির করেছেন। অনুগ্রহ বৃদ্ধির
সাথে সাথে শুকরিয়া আদায়ও বৃদ্ধি পাবে, পেতে থাকবে। আরো স্থির করেছেন আমারা যেন দিন-রাত সদা-সর্বদা নিরলসভাবে সপ্রশংস
তাসবীহ পাঠকারী ফেরেশতাদের অনুরূপ হয়ে যাই বরং রুকূ-সিজদা, অবিরাম তাসবীহ ও নিরলস জিকিরে নিমগ্ন থাকার ক্ষেত্রে আমরা তাদের থেকেও বেশী হকদার। তাই এ প্রতিযোগিতার ময়দানের সাথে মিল রেখেই সালাতের বিধানকে
সাজানো ও কার্যকর করা হয়েছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ও
তা'আলা ইরশাদ করেন:
وَاشْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ
تَعْبُدُونَ
"তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর,
যদি তোমরা তারই ইবাদাত করে থাক "। (সুরা নাহাল ১১৪)
সালাত সর্বোত্তম আমল, সুতরাং একে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম বলেই জ্ঞান করতে
হবে।
আল্লাহ তা'আলা যখন নিজ খলীল মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বলে এই বলে সুসংবাদ
দিলেন :
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
"নিশ্চয় আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি"। (সুরা কাওছার ০১)
কাউসার হচ্ছে অনেকগুলো
কল্যাণ ও নিয়ামতের সমষ্টি। জান্নাতস্থ কাউসার নির্ঝরিণী ও হাউজ তারই অন্তর্ভুক্ত।
এ সুসংবাদের পরপরই
এ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
"সুতরাং তুমি তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় ও কুরবানী কর"। (সুরা কাওছার ০১)
অনুরূপভাবে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে যখন তাঁকে "মহান বিজয়ের"
মূল্যবান নিয়ামত দান করা হয় তখন সাথে সাথে তিনিও মহা-প্রাপ্তির শুকরিয়া আদায়ের প্রতি
গুরুত্বারোপ করে দেখিয়ে উম্মে হানী বিনতে আবী তালেবের ঘরে প্রবেশ করলেন। বিবরণটি সহীহ বুখারীতে এ ভাবে বিবৃত হয়েছে:
মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে
হানীর ঘরে গোসল করেছেন অতঃপর আট রাকআত সালাত আদায় করেছেন। (বোখারী-হাদস নং ৪২৯২)
সাহাবী আবু র্যার
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
يصبح على كل سلامى من أحدكم صدقة فكل تسبيحة صدقة، وكل
تحميدة صدقة، وكل تهليلة صدقة, وأمر بالمعروف صدقة، ونهي عن المنكر صدقة، يجزي عنه
ذلك ركعتان يركعهما من الضحى.
তোমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন সকালে শরীরের প্রত্যেক জোড়ার উপর
একটি করে সদকা নিয়ে উপনীত হও। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) একটি সদকা, প্রত্যেক তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) একটি সদকা, প্রত্যেক তাহলীল (লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ) একটি সদকা, সৎ কাজের আদেশ একটি সদকা, অসৎ কাজ থেকে
বারণ একটি সদকা, চাশতের দু-রাকাত সালাত এ সবগুলোর পরিবর্তে যথেষ্ট।
(সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৭২০, বাবু ইস্তেহবাবি সালাতিদ
দোহা)
সাহাবী আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি
في الإنسان ثلاثمائة وستون مفصلا، فعليه أن يتصدق من
كل مفصل منها صدقة قالوا : فمن يطيق ذلك يا رسول الله؟ قال النخامة في المسجد
تدفنها، والشيء تنحيه عن الطريق، فإن لم تقدر فركعتا الضحى تجزي عنك،
প্রত্যেক মানুষের শরীরে তিন শত ষাটটি জোড়া রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার পরিবর্তে একটি করে সদকা করা তার উপর জরুরি। লোকেরা বলল : হে আল্লাহর রাসূল! এর সামর্থ্য রাখে কে? তিনি বললেন : মসজিদে নিক্ষিপ্ত থু থু মিটিয়ে ফেলবে, রাস্তা থেকে (কষ্টদায়ক) বস্তু অপসারণ করবে,
যদি না পার, তাহলে চাশতের দু-রাকআত তোমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে যাবে। (হাদিস নং ৪২৩৯)
হে লোক সকল! যারা পার্থিব
কাজে ব্যস্ত হয়ে সালাত নষ্ট করছ। আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত- সুস্থতা, নিরাপত্তা, রিযক, সম্পদ ইত্যাদির কারণে প্রতারিত-প্রবঞ্চিত হয়ো না। আল্লাহর নেয়ামত-অনুগ্রহের মূল্য প্রদান কর। যথাযথভাবে তাঁর শুকরিয়া আদায় কর।
আল্লাহ তা'আলা বলেন
وَمَنْ يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ
وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। আর কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও প্রশংসার্হ।
(সূরা লোকমান ১২)
আল্লাহর নেয়ামতের মাধ্যমে
তার আনুগত্য ও সন্তুষ্টি অর্জনে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। খুব সতর্ক হও। আল্লাহ প্রদত্ব নেয়ামতের মাধ্যমে তার অবাধ্যতায় প্রবৃত্ত হয়ো
না। তার অকৃতজ্ঞতায় জড়িয়ে
যেয়ো না।