কি ভাবে মানুষকে পথ ভ্রষ্ট করে জানেন?/শয়তানের কৌশল
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ
اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ
أَمْرِ رَبِّهِ ۗ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِي
وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
‘‘আর স্মরণ কর, আমি যখন ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমকে সিজদা কর’, তখন সকলেই সিজদা করল ইবলীস ব্যতীত; সে জিনদেরই একজন। সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল।’’ (সূরা আল-কাহাফ ৫০)
শয়তান দাওয়াতের কর্মপদ্ধতি
কিংবা দাওয়াতের বিষয়বস্তু উভয় ক্ষেত্রেই এমন কৌশল অবলম্বন করে, যাতে সে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়। ইবনুল কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যাহ্ রহ. বলেন,শয়তানের দাওয়াতের বিষয় বস্তুতে অগ্রসর হওয়ার ছয়টি ধাপ রয়েছে। এ ছয়টি ধাপে শয়তান মানুষকে আহবান জানায় কুপথে চলতে।
প্রথম ধাপ :
মানুষ শির্ক কিংবা
কুফরে লিপ্ত হোক, শয়তান সর্বপ্রথম এ প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ব্যক্তি যদি মুসলিম হয়, তাহলে সে (তাকে বিভ্রান্ত করতে) পরবর্তী ধাপ অবলম্বন করে।
দ্বিতীয় ধাপ :
‘বিদ‘আত’। ‘ব্যক্তি যদি মুসলিম হয়, তাহলে সে যেন নিজে বিদ‘আত উদ্ভাবন করে এবং এর প্রচলন করে’ দ্বিতীয় পর্যায়ে শয়তান এ-প্রয়াসই চালায়। কিন্তু ব্যক্তি যদি সুন্নতের পাবন্দ হয়, তাহলে শয়তান তৃতীয় কৌশল অবলম্বন করে।
তৃতীয় ধাপ :
‘কবীরা গুনাহ’ বড় পাপ বা নাফরমানীর স্তর। শয়তান মানুষকে কবীরা গুনাহে লিপ্ত করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যদি তাকে এসব থেকেও মুক্ত রাখেন, তবুও শয়তান হতোদ্যম হয় না। তখন সে চতুথ কৌশল অবলম্বন করে।
চতুর্থ ধাপ :
‘ছগীরা গুনাহ’, ব্যক্তিকে কবীরা গুনাহে লিপ্ত করতে না পারলে শয়তান ছগীরা গুনাহে
লিপ্ত করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু ব্যক্তি যদি এর থেকেও মুক্ত হয়, তাহলে শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করতে ভিন্ন কৌশলে লিপ্ত রাখার চেষ্টা করে। যা পরবর্তীতে দু’টি ধাপে উল্লেখিত হচ্ছে।
পঞ্চম ধাপ :
‘মুবাহ’ যা করলে ছাওয়াব নেই,
না করলে গুনাহ নেই। এ ধরনের মুবাহ কাজে ব্যক্তিকে শয়তান এমনভাবে লিপ্ত রাখে যে, এতেই সে পূর্ণ সময় নিঃশেষ করে। কিন্তু যে সব জরুরী বিষয়ে আমরা আদিষ্ট, তাতে সময় দেয় না।
ষষ্ঠ ধাপ :
শয়তান মানুষকে অধিক
ফযীলতের আমল থেকে বিরত রেখে, অপেক্ষাকৃত কম ফযীলতের একটা নির্দিষ্ট ভাল আমলে লিপ্ত রাখে। আর সে ব্যক্তিও উত্তম ও সুন্দরতম আমল থেকে বিরত থেকে এতেই নিবিষ্ট
থাকে।
যেমন : ফরয ছেড়ে সুন্নত
নিয়ে ব্যস্ত থাকা। অদ্ভুত! ফরয
ছুটে যাচ্ছে অথচ সুন্নত নিয়েই ব্যস্ত!!
শয়তান কিন্তু তার
দাওয়াতে তৎপর। ক্রমান্বয়ে
অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে যাচ্ছে। শ্লথগতিতে উপর্যুপরি পদক্ষেপ গ্রহণের কৌশলে মানুষকে কাবু করছে
সে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
وَمِنَ الْأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا ۚ كُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছেন তা থেকে খাও এবং শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’’ (সূরা আল-আন‘আম ১৪২)
মানুষের পেছনে শয়তান
প্রথমে অল্প-অল্প প্রচেষ্টা চালায় এবং ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে।
সকল শ্রেণীর মানুষের
কাছে সে তাদের জন্য উপযোগী পন্থায় ও পদ্ধতিতে দাওয়াত দেয়। তাপসীর কাছে যায় কাছে তাপস্যের পথে, বিদ্যানের কাছে বিদ্যার পথে, অজ্ঞের কাছে যায় অজ্ঞতার পথে যায়।
সংকলন : ডক্টর আব্দুল্লাহ
আল-খাতির
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার - ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ