Search This Blog

My Blog List

12.1.18

আমি বা আমরা কেন সালাত/নামাজ আদায় করব?

আমি বা আমরা কেন সালাত/নামাজ আদায় করব?


আমি কেন সালাত আদায় করব?
 
সালাত মানব জাতির প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া
স্বাধীনতা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়বিশ্বের আনাচে কানাচে-প্রতিটি স্থানে ধ্বনিত-অনুরণিত ও উচ্চারিত হচ্ছে মানব মুক্তি ও স্বাধীনতা নামক এ মৌলিক বিষয়টিতবে সফলতার চিত্র অঙ্কন করতে গেলে যে চিত্রটি সকরুণভাবে দৃশ্যমান হয়, তা হচ্ছে, কেবলমাত্র কিছু বক্তৃতা-বিবৃতি- স্লোগান ও নান কথার ফুলঝুরিআর মনে লালিত স্বপ্ন ও স্বাধীনতার প্রতি প্রবল টানব্যাস! সফলতা বলতে এটুকুই
বিভিন্ন দল-সংগঠন-সংস্থা স্বাধীনতার মৌল ভিত্তি সম্পর্কে তাদের বুঝ ও ধ্যান ধারণা অনুযায়ী সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়তআর মানুষ প্রকৃতিগতভাবে মুখাপেক্ষিতা ও বশ্যতাপ্রবণসৃষ্টিগতভাবেই এ প্রবণতা তার স্বভাবে মিশে আছেতার এ প্রকৃতির কারণেই সাগ্রহে উদ্যোগী হয় বিনয়-বশ্যতা, হীনতা ও নীচতার প্রতিপ্রত্যাবর্তিত হয় সার্বিক অমুখাপেক্ষীতার মালিক, সকল শক্তির উৎস, মহান সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের প্রতি
কবি বলেন:
والفقر وصف ذات لازم لي أبدا ـــ كما الغنى أبدا وصف له ذاتي
দারিদ্র্য-মুখাপেক্ষিতা চিরন্তন সত্তাগত স্বভাব আমার
যেমন শাশ্বত অমুখাপেক্ষীতা সত্তাগত প্রকৃতি তাঁর
এ মূল রহস্যের কারণেই -বোধকরি- মানুষের অবস্থা স্থির হতে পারে না, তার হৃদয়-মন প্রশান্তি লাভ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে নিজ মাওলা ও প্রভুর নিকট সর্বস্ব সমর্পণ করেতাঁর নির্ভেজাল আনুগত্যে নিজের সর্বস্ব বিলীন করে দেয়সর্বাবস্থায় একমাত্র তাঁর দিকেই ধাবিত হয়তাঁর উপরই আস্থা রাখেতাঁকেই স্মরণ করে আপদে-নিরাপদেকেননা এ দাসত্ব ও আনুগত্যই হচ্ছে স্বাধীনতার সর্বোচ্চ স্তরআযাদী ও মুক্তির সর্ব শেষ চূড়াকারণ, ফকীরসর্বস্ব বান্দা যখন অভাবহীন শাশ্বত শক্তিমান একমাত্র মাওলার বশ্যতা স্বীকার করে নেয় এবং তার আনুগত্যে নিজকে সতত সমর্পণ করে, তখন থেকে সে ভিন্ন ভিন্ন তাবৎ শক্তি ও কর্তৃত্বের প্রভাব- বলয় থেকে নিজকে মুক্ত ও স্বাধীন ভাবতে শুরু করেআসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা-মালিক ভিন্ন অন্য কারো দিকে অন্তর ধাবিত হয় নাকারো জন্যই মাথা নিচু হয় নাকারো বশ্যতা স্বীকার করতেই মন প্রস্তুত হয় না
বিশ্ব বিখ্যাত গবেষক ড. ওমর সুলায়মান আল-আশকার বলেন
إن مفهوم العبودية لله في الإسلام يعني الحرية في أرقى صورها وأكمل مراتبها، العبودية لله إذا كانت صادقة تعني التحرر من سلطان المخلوقات والتعبد لها، فالمسلم ينظر إلى هذا الوجود يظرة صاحب السلطان، فالله خلق كل ما فيه من أجلنا وسخره لنا، قال تعالى : وسخر لكم ما في السموات وما في الأرض جميعا الآية : الجاثية
"ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ তা'আলার দাসত্বের যে ধারণা ও বুঝ দেয়া হয়েছে, সেটিই হচ্ছে মূলত স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্তর এবং সর্বোচ্চ রূপ-রেখাআল্লাহ তা'আলার দাসত্ব যদি বাস্তবিক অর্থেই গ্রহণ করা হয়, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, সে সৃষ্টিকুলের কর্তৃত্ব-বলয় ও তাদের আনুগত্য থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হয়ে গেলসুতরাং একজন মুসলিম এ বিশ্ব চরাচরকে দেখবে একজন কর্তৃত্ববান-প্রভাবশালীর দৃষ্টিতেকারণ আল্লাহ তা'আলা ধরাপৃষ্ঠের যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন আমাদের জন্যই এবং সব কিছুকে আমাদের বশীভূতও করে দিয়েছেন"
ইরশাদ হয়েছে
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেননিশ্চয় এর মধ্যে চিন্তাশীল জাতির জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী (জাছিয়া ১৩)
বিষয়টি যখন এমনই তাহলে একজন মুসলিম কোনক্রমেই এ সৃষ্টির কাছে নত ও অনুগত হতে পারে নাকোন ব্যাপারে তাদের কাছে ছোট হতে পারে নাকেননা তাবৎ সৃষ্টিকুলের মর্তবা-মর্যাদা মানুষ থেকে নিম্নস্তরের বরং তাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে মানুষের সেবাদানের জন্যঅনুরূপভাবে একজন মুসলমান তার মতই একজন মানুষকে তার অনুগত দাসে পরিণত করতে পারে নাকেননা মানুষ বলতেই (আনুগত্য স্বীকার কারী) দাসতার সৃষ্টিকর্তার দাসত্বের জন্যই তার অস্তিত্ব-আবির্ভাবতাই সে স্বীকার করুক বা অস্বীকার করুকসুতরাং একজন দাস অপর দাসকে নিজের দাস বানাতে পারে না
কিছু মানুষ আছে যারা ধারণা করে যে, তারা আল্লাহর তার অনুবর্তিতা বাদ দিয়ে স্বাধীনতা বাস্তবায়নে সক্ষমএরা নিঃসন্দেহে ভুলের মাঝে আকণ্ঠ ডুবে আছেকারণ সকল মানুষ বরং তাবৎ সৃষ্টির অনুগত গোলাম হয়েই বেঁচে আছে এবং থাকবেতাই সে আনুগত্য করুক বা অস্বীকার করুকহ্যাঁ, এক দাসত্ব থেকে অন্য দাসত্বে পরিবর্তিত হতে পারেদাসত্ব ও গোলামী থেকে বের হয়ে স্বাধীন হওয়ার সুযোগ নেইবেশির বেশি এতটুকু হতে পারে যে, আল্লাহর দাসত্ব থেকে বের হয়ে তাগূতের দাসত্ব করবেমূর্তি, প্রতিমা, সূর্য, চন্দ্র কিংবা ইউরো,ডলার ইত্যাদির কাছে নিজকে সমর্পণ করবেএ ধরণের লোকদের আল্লাহ তা'আলা খোলামেলাভাবে তিরস্কার করেছেন, নিন্দা জানিয়েছেন তাদের এহেন কর্মকাণ্ডেরযথাঃ-
وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ
"আর তাদের কতক বানর, শূকর এবং তাগূতের গোলাম-উপাসনাকারী বানিয়ে দিয়েছেন (সূরা মায়েদা ৬০)
যারা টাকা পয়সা, ধন-দৌলত ভোগ-বিলাসকে নিজদের জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে, ইসলামী শরীয়তও তাদেরকে একইভাবে ঐ সব বস্তুর গোলাম হিসেবে বিবেচনা করেইমাম বুখারী রহ. সাহাবী আবুহুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু এর বরাতে উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
تعس عبد الدينار وتعس عبد الدرهم وتعس عبد الخميصة وتعس وانتكس وإذا شيك فلاانتقش...
"ধ্বংস হয়েছে দীনারের গোলাম, ধ্বংস হয়েছে দিরহামের গোলাম, ধ্বংস হয়েছে পোশাকের গোলামধ্বংস হয়েছে, পুনরায় ধ্বংস হয়েছে..."
আর প্রকৃত স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হয় সালাতের মাধ্যমেইকারণ একনিষ্ঠ বিনয় সংবলিত সালাত, যা একজন মুসলিম পূর্ণ নিয়মানুবর্তিতার সাথে তার রূহ- হাকীকত-আদব সহকারে সময় মত আদায় করে; সে সালাত কখনও একাত্ম হয় না গাইরুল্লাহর ইবাদাত-আনুগত্য, মানুষের দাসত্ব ও জাহেলী জীবনাদর্শের সাথেযার বাহ্যিক রূপ হচ্ছে র্শি‌ক-পৌত্তলিকতা, বিভিন্ন কুসংস্কার এবং উপকার ও ক্ষতি সম্পর্কে তাদের বিশ্বাসযেমন আমরা বর্তমান গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার যুগে প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করছিসালাতের প্রত্যেকটি রুকন এবং সালাত আদায়কারী তাতে যা পাঠ ও ঘোষণা করে তার সবগুলোই গাইরুল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাতকে অস্বীকার করে খুব দৃঢ়তার সাথে এবং বিরোধিতা করে জোরালোভাবেই
যেমন সালাত আদায়কারী সালাত শুরুই করে الله أكبر [আল্লাহ সব চেয়ে বড়] বাক্যের মাধ্যমেযার দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত সকল বস্তুর বড়ত্বকে অস্বীকার করা হয় এবং এদের আনুগত্য ও বশ্যতার বিরোধিতা প্রকাশ করা হয়
এরপর সে পাঠ করে:
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
"সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ তা'আলার জন্যই" (শূরা ফাতিহা ২ শূরা সাফফাত ১৮২ শূরা জাসিয়া ৩৬)
এর মাধ্যমে সে ঘোষণা করছে, তিনি ভিন্ন আর কোন রব ও প্রতিপালক নেই এবং তিনি ব্যতীত কারো প্রশংসা নেইঅর্থাৎ তিনি ছাড়া কেউ এ পর্যায়ের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নয়
সালাত আদায়কারী তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করে,
 إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
তোমারই আমরা এবাদত করি, এবং তোমারই কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি (শূরা ফাতিহা ৫)
ঘোষনা পত্রের মাধ্যমে যে, তিনি ভিন্ন আর কারো ইবাদাত নেই এবং আর কেউ ইবাদাত পাওয়ার যোগ্যও নয়সাহায্য একমাত্র তার নিকটই চাইতে হবেতিনি ব্যতীত আর কারো নিকট চাওয়া যাবে না
একইভাবে সে বিরোধিতা প্রকাশ করে রুকূ-সিজদার মাধ্যমেযে শারীরিক ও আন্তরিকভাবে সম্পাদনযোগ্য যাবতীয় রুকু অনুরূপভাবে গোপনীয় ও বাহ্যিক সকল প্রকার সিজদা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই সম্পাদন করতে হবেতিনি ব্যতীত কারো নিকট মাথা নত করা যাবে নাবরং তিনি ভিন্ন কারো এ যোগ্যতাই নেই যে কেউ তাদের কাছে মাথা নত করবে
একারণেই যুগে যুগে দেখা গিয়েছে, যাদের মধ্যে সালাত তার তাত্ত্বিক দিকগুলোসহ- বাস্তবায়ন হয়েছে তারাই বিভিন্ন রাজা-বাদশাহর সামনে সর্বাধিক সাহসী মানুষরূপে পরিচিতি পেয়েছেনএবং হক ও সত্য প্রকাশে থেকেছেন সদা নির্ভীকযেমন রিবঈ ইবন আমের রাদিআল্লাহু আনহু যিনি পারস্য সেনাপতি রুস্তম এর নিকট দূত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেনতাঁরা ছিলেন পার্থিব ভোগ-সামগ্রীর প্রতি সর্বাধিক নিরাসক্ত এবং সীমালঙ্ঘন ও পাপ কাজ থেকে অনেক অনেক অধিকতর দূরে অবস্থানকারী

 আরও পড়ুন