ফাসেক এবং বিদআতী ইমামের পিছনে নামায হবে কি?
ফাসেক এবং বিদআতী ইমামের পিছনে নামায হবে কি?
ফাসেক, বড় গুনাহকারী বা বারংবার ছোট গুনাহকারী ব্যক্তি। আর এখানে বিদআতী বলতে ঐ বিদআতকে বুঝানো হয়েছে যা, কুফর নয়
ক- উপরোক্ত মন্দ গুণের অধিকারী ইমামের পিছনে নামায সহীহ। বিশেষ করে সেই ইমাম যদি রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং
তাকে অপসারণ করার ক্ষমতা না থাকে কিংবা তাকে সরাতে গিয়ে যদি ফেতনা-ফাসাদের আশংকা থাকে, তাহলে তার পিছনে নামায শুদ্ধ। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের একটি আক্বীদাও। ইমাম ত্বাহাবী বলেনঃ ‘আমরা আহলে কিবলার প্রত্যেক পরহেযগার এবং গুনাহগার ব্যক্তির পিছনে
নামায জায়েয মনে করি’। (শারহুল আক্বীদা আত্ ত্বাহাবিয়া,২/৫৬৬)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “লোকদের ইমামতি করবে, তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অধিক পাঠকারী” ।
মুসলিম, নং (৬৭৩) এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ
আম/ব্যাপক।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক প্রকার ইমামের সম্পর্কে
বলেনঃ “তারা (ইমামেরা) তোমাদের নামায পড়াবে, যদি তারা সঠিক করে, তাহলে তোমাদের নামাযের সওয়াব তোমাদের জন্যে আর যদি সে ভুল করে
তাহলে তোমাদের সওয়াব তোমাদের জন্যে এবং তাদের ভুল তাদের জন্যে”। (বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬৯৪)
সাহাবাগণের মধ্যে ইবনে উমার যিনি সুন্নতের প্রতি সদা আগ্রহী
হিসাবে পরিচিত, তিনি অত্যাচারী গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসেূফের পিছনে নামায সম্পাদন
করতেন। (বুখারী, হজ্জ অধ্যায়, নং ১৬৬০)
ইমাম আহমদ সহ তাঁর যুগের উলামাগণ মুতাযেলীর পিছনে জুমআ ও ঈদের
নামাযে হাজির হতেন। (মুগনী, ইবনু কুদামাহ,৩/২২)
সউদী স্থায়ী উলামা পরীষদের ফাতওয়ায় বিদআতী ইমামের পিছনে নামায
সম্পর্কে বলা হয়, যদি বিদআত কুফর ও শির্ক পর্যায়ের হয়, তাহলে তার পিছনে নামায অশুদ্ধ আর বিদআতকারীর বিদআত যদি কুফরী পর্যায়ের না হয়, যেমন মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া, তাহলে তার নিজের নামায শুদ্ধ এবং তার পিছনে নামায আদায়কারীর
নামাযও শুদ্ধ। (ফাতওয়া নং (১২০৮৭),৭/৩৬৪-৩৬৫)
এ বিষয়ে একটি মূলনীতি হচ্ছে, ‘যার নিজের নামায শুদ্ধ
তার ইমামতীও শুদ্ধ’। (আশ্ শারহুল্ মুমতি, ইবনে উসাইমীন, ৪/২১৭)
এসব বিধান ও নিয়মের মূল কারণ হচ্ছে, ইসলামী ঐক্য ও সংহতি রক্ষা। ইসলাম সদা ঐক্যের আদেশ দেয় এবং মতভেদ থেকে সতর্ক করে। তাই দেখা যায়, যেখানে মানুষ ইমামদের সাধারণ ভুল-ত্রুটি নিয়ে মতভেদ করে, সেখানে লোকেরা দলে দলে বিভক্ত হয়, এক পর্যায় একাধিক মসজিদ তৈরি হয়, এমনকি গ্রাম ও মহল্লা ভেঙ্গে আপসে ঘোর শত্রুতায় লিপ্ত হয়।
কিন্তু বিদআতী ও ফাসেক ইমামের বর্তমানে যদি মুআহ্হিদ ও মুত্তাকী
ইমামের পিছনে নামায পড়া সম্ভব হয়, তাহলে পরহেযগার ও সহীহ আক্বীদা পোষণকারী ইমামের পিছনে নামায
পড়া উত্তম। কারণ, অবশ্যই ফাসেক থেকে মুত্তাক্বী উত্তম এবং বিদআত থেকে সুন্নত উত্তম। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم
مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই বেশী সম্মানীয় যে ব্যক্তি বেশী মুত্তাক্বী।” (সূরা হুজুরাত/১৩)
উদাহারণ স্বরূপ যদি কারো বাড়ির পার্শে দুটি মসজিদ থাকে, একটির ইমাম সুন্নাহ ও তাক্বওয়ার অধিকারী আর অপরটির ইমাম বিদআত ও ফিসকে লিপ্ত, তাহলে সে প্রথমটির পিছনে নামায আদায় করবে;
যদিও সেই মসজিদটি দূরে অবস্থিত হয়।
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব মাদানী,
লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, খাফজী দাওয়াহ
এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
Email: a.raquib1977@yahoo.com
সম্পাদক: শাইখ আবদুল্লাহিল-হাদী মু. ইউসুফ
লিসান্স, মদীনা ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়
দাঈ, জুবাইল
দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।